কেমন হল ’83’ movie?
সিনেমা নয় কবীর সিংয়ের ৮৩ আসলে একটা টাইম মেশিন। যে টাইম মেশিনে মিলে গিয়েছে ১৯৮৩ আর ২০২১। এই গল্পের শুরু থেকে শেষ জানা সত্ত্বেও আড়াই ঘণ্টা টানটান উত্তেজনায় দর্শকদের আসনে বসিয়ে রাখতে ক্রিপ্টে একের পর এক মোচড় এনেছেন পরিচালক কবীর সিং। আসলে তিনি এমন একটা প্রজন্মের কাছে বিশ্বকাপ জয়ের গল্প শোনাতে বসেছেন, যারা ২০১১-এর বিরাট রঙিন ফ্রেমে ধোনি, যুবরাজ, সচিন, বিরাটদের কৃতিত্বে বেঁচেছেন। সেই মহান কীর্তির ভিত যেখানে গাঁথা হয়েছিল সেই ৮৩-এর লর্ডসের সঙ্গে পরিচয় করিয়েছেন কবীর খান। গল্পে ক্রিকেটের ২২-গজের যুদ্ধের পিছনেও Kapil Dev, শ্রীকান্ত, মোহিন্দরের দলকে যে অসম লড়াই লড়তে হয়েছিল সেই উপাখ্যান পর্দায় মেলে ধরলেন পরিচালক। ক্রিপ্ট এবং ডায়লগই ৮৩-এর ইউএসপি।
একটা দল যার অধিনায়ক ইংরাজিতে সড়গড়ও নন। প্রশ্নের উপযুক্ত জবাব দিতে শব্দ খুঁজতেই প্রবল বিড়ম্বনায় পড়েন। তবুও ব্রিটিশ মিডিয়া থেকে ইংল্যান্ডের রানি কারওই মুখোমুখি হতে ভয় পান না। ভিভ রিচার্ড হোক বা ক্লাইভ লয়েড ব্যাট-বলেই মুখ বন্ধ করেন। তাঁর দলকে কহতব্যের মধ্যেই ধরে না কেউ। এমনকী তাঁর নিজের দেশের মিডিয়ারও তাঁদের প্রতি আস্থা ছিল না। সেই অসম্মানকে ছোট ছোট দৃশ্য আর মর্মভেদী সংলাপে বারবার দর্শকদের কাছে পৌঁছে দিয়েছেন পরিচালক। মিডিয়ার অসম্মানজনক প্রশ্ন, ম্যানেজার মান সিংয়ের লর্ডসের পাস চাইতে গিয়ে অপমানিত হওয়ার দৃশ্য ক্রিকেটপ্রেমী দর্শকদেরও রক্ত গরম করার জন্য যথেষ্ট।
একটা টিম নিজেদের ক্রিকেটীয় দক্ষতায় বিশ্বকাপ জিতেছে । সেই জয়ের মধ্যে অসাধারণত্বের খুঁটিনাটিও দর্শকদের কাছে তুলে ধরেছে এই সিনেমা। যেমন প্রতিদ্বন্দ্বী ক্রিকেট জায়েন্ট ওয়েস্ট ইন্ডিজ বোলারদের বর্ণনায় বলা হয়েছে, ‘উসকি হাইট ৭ ফুট হ্যায়। হাত অর ২-২.৫ ফুট উপর যাতা হ্যায়। উপর সে ২-৩ ফুট জাম্প করকে বল ডালতা হ্যায়। আব বাতাও ১২ ফুট উঁচে সে আতি হুয়ি বল খেলনা ক্যায়সা হোগা!’ কপিল দেবের টিমের একের পর এক চ্যালেঞ্জ এভাবেই এসেছে পর্দায়। ড্রেসিংরুম স্পিচ, টিম বাসে কপিল দেবের কমিক স্পিচ, শ্রীকান্তের এক পার্টিতে ব্রিটিশ মিডিয়াকে দেওয়া জবাবের দৃশ্য আলাদা করে উল্লেখ্য। ক্রিকেটের সিনেমায় ক্রিকেটের দৃশ্যগুলিতে বাস্তব, অতীত, vrfx-র সুচারু মিশ্রণে নিখুঁত।
এই সিনেমার ম্যান অফ দ্য ম্যাচ Kabir Khan। খেলার মাঠে রূপকথা পর্দার সাফল্যে পরিণত করার মুন্সিয়ানা তিনি চাক দে ইন্ডিয়া-তেই প্রমাণ করে দিয়েছেন। তবু ৮৩’ তার এ যাবৎকালের সেরা। বাস্তবের কপিল দেব-মোহিন্দর এই সিনেমায় দর্শকদের জন্য বিশেষ চমক।
যার কথা না বললে ৮৩-এর কথা বলা শেষ করাই যাবে না তিনি হলেন Ranveer Singh। কিন্তু, পর্দায় কোথায় রণবীর সেখানে তো শুধুই কপিল দেব। কিংবদন্তি ক্রিকেটারের চলা, বলা, নটরাজ শটের বাইরে তাঁর চোখের ভাষা, ইংরেজি না বলতে পারার বিড়ম্বনা… সিনেমার প্রতিটা পরতে রণবীর কপিলের প্রতিবিম্ব। বাজিরাও , খিলজির চেয়েও পর্দায় কপিল দেবকে ফুটিয়ে তোলা রণবীরের জীবনের সবথেকে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল। কারণ সেই ইতিহাসের চরিত্রদের কোনও বাস্তব রেফারেন্স নেই, কিন্তু কপিল দেব আছেন। আর রক্তমাংসের কপিল দেবের পাশে আছেন পর্দার কপিল রণবীর সিং। সঙ্গে এই অসাধারণ সিনেমার বাকি কলাকুশলীরাও। পঙ্কজ ত্রিপাঠী বরাবরের মতোই অসাধারণ। Deepika Padukone-এর এই সিনেমায় কিছু করার ছিল না। তবুও তাঁর টোল ফেলা হাসি মোহময়ী সৌন্দর্যের উপস্থিতি দর্শকদের কাছে উপরি পাওনা।